প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী ও লেখক রিচার্ড ডকিন্স তখন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছিলেন। সে সময় তার এক ধার্মিক বন্ধু তার বান্ধবী সহ স্কটল্যান্ডের একটি দ্বীপে ক্যাম্পিং করতে যান এবং মাঝরাতে দুজনেরই ঘুম ভেঙে যায় ‘শয়তানের কন্ঠস্বর’ শুনতে পেয়ে। তাদের মতে এত ভৌতিক, পৈশাচিক, নারকীয় শব্দ কেবলমাত্র শয়তানেরই হতে পারে। পরবর্তীতে সেই বন্ধু পাদ্রী হিসেবেও দীক্ষা নেন।
বেশ কিছুদিন পর রিচার্ড ডকিন্স আড্ডার ফাঁকে এই গল্পটি বলেন। সেখানে আবার উপস্থিত ছিলেন দুজন অভিজ্ঞ পাখি বিশেষজ্ঞ। তারা একসাথে হেসে ওঠেন। এবং সমস্বরে বলে ওঠেন ‘Manxs Shearwater’। শয়তানের মত কন্ঠ হওয়ার কারণে এই পাখিকে পৃথিবীর অনেক স্থানেই স্থানীয় ভাষায় ‘ডেভিল বার্ড’ও বলে। ডকিন্সের বন্ধু ও তার বান্ধবীও ওই ‘শয়তান পাখি’র ডাকই শুনেছিলেন। কিন্তু তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস তাদেরকে ঐ ডাককে শয়তানের ডাক ভাবতে বাধ্য করে। কি হত যদি তারা ‘শয়তান’ বিষয়টার সাথেই পরিচিত না থাকতো? এই ডাক শুনে হয়ত তাদের একটু গা ছমছম করতো অথবা সেটিও করতো না। তাদের কাছে হয়ত খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনাই মনে হত। তারা কোন প্রকার বিচার বিশ্লেষণ না করেই একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনাকে শুধুমাত্র ‘বিশ্বাসের সাহায্যে’ অলৌকিক ঘটনায় রুপান্তরিত করেছেন।
এই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা প্রায়ই শুনে থাকবেন। কোন মুসলিম হয়ত বলবে সে জ্বিন দেখেছে। আবার কোন হিন্দু হয়ত দেখেছে ভূত বা পেত্নী। এসবের পেছনে তারা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কাহিনীও শুনিয়ে দেবে।
এ ধরনের ঘটনাকে বলা হয় ‘নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে কুযুক্তি। দাবীকারী এখানে কোন অলৌকিক সত্ত্বার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। দাবীকারী ‘আসলে কি ঘটেছিল’ সেটা যাচাইয়ের কোন চেষ্টাই করেননা বা এ বিষয়ে পুরোপুরি অজ্ঞ থাকেন। অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দাবী উত্থাপিত হয় বলে এটি ‘অজ্ঞতার কুযুক্তি’ও বটে। পুরো ঘটনাটিকে তিনি তার নিজস্ব বিশ্বাসের স্থান থেকেই বিবেচনা করে থাকেন। এধরনের কুযুক্তি কোন অবাস্তব চরিত্রের অস্তিত্ব প্রমাণে হরহামেশাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যেকোন অজানা বিষয়কে জানার পদ্ধতি হচ্ছে, তা নিয়ে পড়ালেখা করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য প্রমাণ যুক্তি দিয়ে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। অজানা বিষয় অপ্রমাণিত কোন কিছুর সপক্ষের যুক্তি বা প্রমাণ হতে পারে না।
ছবিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বিখ্যাত ‘Manxs Shearwater’ বা ডেভিল বার্ডকে।
Written By : Blogger Nafis Sadique Shatil
লেখক : ব্লগার নাফিস সাদিক শাতিল
© নাফিস সাদিক শাতিল/ NAFIS SADIQUE SHATIL
আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন