বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

Contact: shatilblog@gmail.com

আখিরাতে জনৈক বিশ্বাসীর কিছু সময়

“কোত্থেকে এসেছেন?” খেঁকিয়ে উঠলেন দেবদূত। তিনি এখানে দারোয়ানের কাজে নিয়োজিত আছেন। আমি আবার বললাম, “পৃথিবী থেকে।”

দারোয়ান সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন, “পৃথিবী? এটা আবার কোথায়? এই নাম তো ইহজীবনে শুনিনি। এক্সাক্ট লোকেশনটা বলেনতো এই পৃথিবীর।”

আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে চাইলো। মরার পর ধরে কেউ আমার পরিচয়টাই বের করতে পারছেনা। মানুষ নামক কোন প্রাণীকে নাকি তারা চিনেই না। পৃথিবী নামক গ্রহ কোথায় আছে তারা কেউ বলতে পারছেনা। সৃষ্টির সেরা জীব বলে পরিচয় দেয়ার পর তারা নিজেরা নিজেরা এক চোট হাসাহাসিও করেছে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “পৃথিবী একটি গ্রহ। যা সৌরজগতে অবস্থিত।”

সৌরজগতের নাম শোনার পরও দেবদূতের মুখের এক্সপ্রেশন পাল্টালো না। আবার একই প্রশ্ন, “এই সৌরজগতটা আবার কি?”

আমি আবার শান্তভাবে জবাব দিলাম, “সূর্য একটি নক্ষত্র। সূর্য ও তাকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ উপগ্রহ ধুমকেতু এসব নিয়ে যেই জগত সেটাই সৌরজগত। এই সৌরজগত অবস্থিত মিল্কিওয়ে নামক ছায়াপথে। মিল্কিওয়ের প্রতিবেশী ছায়াপথ হল এন্ড্রোমেডা।”

ছায়াপথের কথা শুনে দেবদূত একটু নড়েচড়ে বসলেন। আমাকে বললেন, “আপনি আসলে আপনার সঠিক লোকেশন বলতে পারছেন না। তবে আপনি যেহেতু একটা ছায়াপথের নাম বলেছেন আমি আমার লাইব্রেরিয়ানকে খবর দিয়ে দেখি উনি কিছু বলতে পারেন কিনা।”

লাইব্রেরিয়ান আসলেন। তাকে সবকিছু খুলে বলার পর তিনি গম্ভীর মুখে বললেন, “সবই বুঝলাম। কিন্তু আপনি যে মহাবিশ্বের কথা বলছেন সেখানে প্রায় দুই লক্ষ কোটির (২,০০০০০০০০০০০০০) কাছাকাছি গ্যালাক্সি রয়েছে। একেকটা গ্যালাক্সিতে আবার রয়েছে শত শত বিলিয়ন নক্ষত্র। সেগুলোর প্রতিটার আলাদা আলাদা নথি আমাদের লাইব্রেরীতে সংরক্ষণ করা আছে। আমি আমার সহকারীকে পাঠাচ্ছি। উনি হয়তো আপনাকে সহযোগীতা করতে পারবেন।”

অবশেষে সপ্তাহখানেক খোঁজাখুজির পর মিল্কিওয়ের খোঁজ পাওয়া গেলো। সহকারী লাইব্রেরিয়ান সাহেব চিন্তিত মুখে বললেন, “সমস্যা হলো আপনাদের মিল্কিওয়েতে প্রায় চারশ বিলিয়ন নক্ষত্র আছে। সেসবের ভেতরে সূর্যকে খুঁজে বের করাটা আমার দায়িত্বের ভেতর পড়েনা। আমি কেসটা আমার একজন উপ সহকারী লাইব্রেরিয়ানকে হস্তান্তর করছি।”

উপ সহকারী লাইব্রেরিয়ান অমায়িক লোক। আমাকে এক গাল হেসে স্বাগতম জানালেন। আমাকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করে বললেন, “আপনার আইডেন্টিটি খুঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব। আপনি একদমই টেনশন করবেন না। আমাকে কয়েকদিন সময় দিন। আশা করি খুঁজে পাবো।”

টানা চার দিন চার রাত খোঁজাখুঁজির পর উপ সহকারী লাইব্রেরিয়ান সূর্য নামক নক্ষত্রের খোঁজ পেলেন। তিনি তার রিপোর্ট দেবদূতের ডেস্কে সাবমিট করলেন। রিপোর্টে তিনি লিখেছেন, “অনেক অনুসন্ধানের পর মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সূর্য নামক নক্ষত্রের পৃথিবী নামক গ্রহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তবে পরিবেশগত কারণে সেখানে কিছু কীট পতঙ্গ জীব জন্তু জন্ম নিয়েছে। এই ব্যক্তি সম্ভবত ওখানকার কোন প্রজাতি বিশেষ।”

রিপোর্ট শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এটা কি শুনলাম। লক্ষ লক্ষ কোটি গ্যালাক্সির ভেতর একটি গ্যালাক্সির লক্ষ লক্ষ কোটির নক্ষত্রের ভেতর মিডিয়াম সাইজের একটা নক্ষত্রের একটা সাধারণ গ্রহে ঘটনা চক্রে আমার জন্ম? সারাজীবন নিজেকে সৃষ্টির সেরা ভেবে বসে থেকে আজ কিনা কীট পতঙ্গের সাথে তুলনা? সারাজীবন এই মহাবিশ্বের সবকিছুকে মানুষের সেবায় তৈরী ভেবে আজ এই অপমান! এসব ষড়যন্ত্র। এগুলো সব চক্রান্ত। এরা বিদ্বেষী। এদের ধ্বং স অনিবার্য।

……

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। যাক এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম। শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কি আজেবাজে স্বপ্ন দেখি। হে মহান স্রষ্টা আপনি শয়তানের সকল অপচেষ্টাকে রুখে দিন।

[বিদেশী কাহিনী এবং ব্লগ থেকে অনুপ্রাণিত]

Blogger: Nafis Sadique Shatil

লেখক : নাফিস সাদিক শাতিল

আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন

পড়ুন যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক বইঃ Debating God With a Brain

পড়ুন ফিকশন বইঃ The Atheist Who Met God and Devil

পড়ুন ভ্রমণ কাহিনীঃ Adventure of Ryan and George

বিজ্ঞানীদের জীবনকাহিনী নিয়ে বইঃ From Apple to Algorithm

Tags :

Recent News

Popular News

Find Us on Youtube