মডেল নাজনীন আক্তার হ্যাপী যিনি নিজের নাম পাল্টে হয়েছিলেন আমাতুল্লাহ, দ্বীনি জীবন যাপনের জন্য যিনি হয়েছিলেন বস্তাবন্দী, তাকে তার জামাই ইসলামিক অনুশাসন অনুযায়ী সূরা নিসার ৩৪ নাম্বার আয়াত পড়ে হালকা উত্তম মধ্যম দিয়েছিলেন।
যেহেতু স্ত্রীকে প্রহার করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহপাক নিজে, আর নবী কারীম (সা:) যেখানে বলেছেন স্ত্রীকে প্রহার প্রসঙ্গে আল্লাহ নিজেই তার বান্দাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেননা- তাই আল্লাহর আইন অনুযায়ী হ্যাপীর বর মুফতি সাহেব তার নিজ স্ত্রীকে শাসন করেছেন। একজন মুসলিম হিসেবে তার বিশ্বাস অনুয়ায়ী তিনি ভুল কিছু করেননি। কারণ কোরান হাদিস এরকমটাই শিক্ষা দেয়।
কোরান হাদিসের আইন আধুনিক আইনের পরিপন্থী। নারীদের অধিকারের বিরুদ্ধে গেলেও আমাতুল্লাহ ও তার স্বামী ইসলামের এসব অমানবিক আইনেই বিশ্বাসী।
হাদিসের ভাষায় একজন পূণ্যবতী স্ত্রী হলেন উত্তম উপভোগ্য উপকরণ। কথাটি যেকোন নারীর জন্য চরম অবমাননাকর হলেও, আমাতুল্লাহ নিজেকে একজন উপভোগ্য উপকরণ মনে করেন। কারণ কোরান হাদিসের প্রতিটি অক্ষরের উপরেই তার অগাধ বিশ্বাস- সেটা যতই অসম্মাননক, অবমাননাকর, অপমানজনক হোক না কেন।
সেই আমাতুল্লাহ আল্লাহর আইন দুনিয়ায় বাস্তবায়নের জন্য আদালতে মামলা করেছেন নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে। শুনেছি তিনি নিজেই একসময় স্বামীকে মাসনা করানোর জন্য মেয়ে খুঁজেছেন। কারণ এটা সুন্নাহ। মাসনার আয়াত মানা যদি তার কর্তব্য হয়, তাইলে স্ত্রী প্রহারের আয়াত কি দোষ করলো? ঐটা মানতে সমস্যা কোথায়? দুইটাই তো কোরানেরই আয়াত।
তিনি বহুবিবাহ বাল্যবিবাহ বৈধ ও সহজ করার জন্যও আন্দোলন করেছেন। তার এসব এক্টিভিজমের জন্য হয়তো অনেক নারীর জীবন ধ্বংস হয়েছে, অনেক মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে, অনেকের অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে।
সেই বিশিষ্ট বহুবিবাহ প্রচারক নারীই এখন বহুবিবাহ করার দায়ে মামলা ঠুকে দিয়েছেন নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে। সে যেই কিতাবকে স্বর্গীয় কিতাব মনে করে, যার প্রতিটা নির্দেশ সত্য মনে করে; সেই কোরানের আইন মেনে প্রহার করার দায়েও মামলা করেছেন। কি অদ্ভুত এদের চরিত্র।
“কোরানের আইন মানার কারণে মামলা? তাও এই স্বাধীন বাংলাদেশে? এই ৯০% মুসলমানের দেশে? নাউজুবিল্লাহ ! আস্তাগফিরুল্লাহ ! ইন্নালিল্লাহ !”
এই আমাতুল্লাহ যেই আদর্শে বিশ্বাসী সেই আদর্শ অনুযায়ী নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়াই একরকম নিষিদ্ধ, নারীদের ঘরের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় হিসাব নিকাশের জ্ঞান হয়ে গেলে তাদের আর পড়ার প্রয়োজন নেই। হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ হওয়া বস্তাবন্দী শস্যক্ষেত্র (ইসলাম মতে) নারীটি ইসলামের হাত থেকে বাঁচতে শেষমেষ শরণাপন্ন হলেন- অনৈসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন বেগানা(তাদের ভাষ্যমতে) নারী এডভোকেটের কাছে।
যেই সহশিক্ষা, নারীশিক্ষা বিরোধী আদর্শ তিনি প্রচার করেন- সেই শিক্ষায় শিক্ষিত নারীই আজ তার ত্রাণকর্তা। যেই তাগুতি আইনের পরিবর্তে তিনি শরিয়া আইন চান, সেই তাগুতি আইনেই তিনি আজ কোর্টে গিয়ে নিজের অধিকারের জন্য মামলা করছেন। এসবই ইসলামে অবৈধ।
তবুও এসব আমাতুল্লাহদের শিক্ষা হবেনা। এরা ছদ্মবেশী, ভন্ড আর লোভী। ইসলাম কি জিনিস এরা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়ার পরও, হুরের সর্দারনী হওয়ার লোভ এরা ছাড়তে পারবেনা। ইস’লামে নারীর প্রতি সহিংসতা আর অবিচারের ভুক্তভোগী হওয়ার পরও এরা জান্নাতের মাছের কলিজা ভুনার লোভ ছাড়তে পারবেনা।
অথবা, এরা চরম স্বার্থপর আর হিংসুটে। ই’স’লা’মের ছায়াতলে ঢুকে নিজের ক্যারিয়ার থেকে ব্যক্তিত্ব সবকিছু ধ্বংস হয়েছে, তাই হয়তো এরা চায় অন্যদের পরিণতিও নিজেত মতো হোক। এই হিংসা থেকেই জেনে বুঝে ইসলামের দাওয়াত দেয়। ঐ লেজকাটা শেয়ালের মতো আর কি।
যাইহোক “ইসলাম দিয়েছে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান।” এই সম্মানের ভারে আজ আমাতুল্লাহ কোর্টের বারান্দায় কেঁদে বেড়াচ্ছে। নারীদের অধিকার নষ্ট করার লড়াই করা নারীটি আজ নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। তার এই লড়াই ইসলাম সমর্থন করেনা।
আফসোস। যারা তার মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে, আমাতুল্লাহ চোখে তারাই বেধর্মী কাফের আর ইসলামের শত্রু।