রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

Contact: nafissadique090@gmail.com, shatil2208@gmail.com

আমার অবিশ্বাসী হয়ে ওঠার গল্প। পর্ব- ১

আমি খুব ছোটবেলা থেকে অনেক কৌতুহলী ছিলাম। আমার মনে প্রথম প্রশ্ন জাগে আকাশ নিয়ে। বিজ্ঞান বইয়ে আমি পড়লাম আকাশ বলে কিছু নেই। কিন্তু ধর্ম বইয়ে পড়লাম আল্লাহ নাকি সাত আসমানের উপরে থাকে। আসমান বলে যদি কিছু নাই থাকে, তাহলে সাত আসমান বলেও কিছু থাকার কথা না। তাহলে আল্লাহ কই থাকে? তারপর ধর্ম বইতে পড়লাম মানুষের শরীর নাকি মাটি দিয়ে তৈরী। আমি কোনভাবেই বুঝতে পারলাম না এটা কিভাবে সম্ভব। শরীরের একেক অঙ্গ তো একেক রকম। এগুলো কি মাটি দিয়ে বানানো সম্ভব। আমার শিশুতোষ মন এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেলোনা।

আমি তখন ফাইভে পড়ি। আমার দাদা আমাকে ‘মরণের পর কবরের আজাব’ নামক একটা বই পড়তে দিলেন। বইতে কবরের অনেক শাস্তির বিষয়ে লেখা আছে। তার মধ্যে একটা হলো কবরের দুপাশের দেয়াল শরীরে এত জোরে চাপ দিবে যে হাড়গোড় ভেঙে গুড়োগুড়ো হয়ে যাবে। আমার মনে প্রশ্ন আসলো তাহলে কবর থেকে যদি কারো লাশ তোলা হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেটা আগের মতো থাকবেনা। সব হাড়গোড় দলাদলা হয়ে যাবে। তাহলে ডাক্তারেরা যেসব কঙ্কাল ব্যবহার করে সেগুলো অক্ষত অবস্থায় আছে কিভাবে?

এছাড়াও কবরে নাকি দুজন ফেরেশতা এসে তিনটা প্রশ্ন করবে। এই প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে না দিতে পারলেই কবরের আজাব স্টার্ট হবে। আমি তিনটা উত্তর মুখস্থ করে ফেললাম। দাদা বললো এতে কাজ হবেনা। যতই মুখস্থ করি ঐ সময় নাকি মনে পড়বেনা। একমাত্র নেককার বান্দাই সঠিক উত্তর দিতে পারবে। আমি দাদাকে প্রশ্ন করলাম কে নেককার আর কে গোনাহগার সেটা তো আল্লাহ ভালো করেই জানেন। তাহলে ফেরেশতা পাঠানোর দরকার কি? সরাসরি আজাব শুরু করে দিলেই হয়।

এরপর নবীদের আয়ু আর উচ্চতা নিয়ে আমার মনে সন্দেহ দেখা দিলো। কিয়ামতের দিনের বর্ণনায় সূর্য মাথার কয়েক হাত উপরে থাকার কথা শুনে আমার মনে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হলো। এগুলোকে কোনভাবেই মানতে পারলাম না। তখন আমি সৌরজগত মহাবিশ্ব সম্পর্কে অল্প বিস্তর জ্ঞানার্জন করে ফেলেছি। আরেকটা বিষয়ে আমার প্রবল সন্দেহ ছিলো নূহ এর সময়ের মহাপ্লাবন সম্পর্কে।

পৃথিবীর এত এত প্রজাতির প্রাণীকে সে কিভাবে একটা নৌকায় নিয়ে ৪০ দিন পানিতে থাকলো এর ব্যাখ্যা কেউ আমাকে দিতে পারেনি। আমার সন্দেহ হলো জ্বিন জাতিকে নিয়ে। অপ্রমাণিত বিষয়ে বিশ্বাস করতে আমার প্রবল অনীহা ছিলো। আমি সবকিছুর প্রমাণ খুঁজতে ব্যস্ত থাকতাম।

এরপর আমার সন্দেহ হয় ‘তাকদির’ বিষয়ে পড়তে গিয়ে। আমার মনে প্রশ্ন আসে, যদি আল্লাহ সবকিছুর ভাগ্য আগে থেকেই লিখে রাখেন, তাহলে আমাদের পরীক্ষাটা কিসের হচ্ছে? দুনিয়ার জীবন আখিরাতের জীবনের পরীক্ষা, কিন্তু আল্লাহ কোরানে বলেছেন, তিনি যা ইচ্ছা করেন সেটা ছাড়া কোন কিছু করার ক্ষমতা কারোরই নাই।

এরকম পরস্পরবিরোধী কথা কখনো কোন সৃষ্টিকর্তার হতে পারেনা। সব কিছু যদি আল্লাহর ইচ্ছায় হয় তাহলে পৃথিবীতে এত এত অন্যায় অত্যাচার অপমৃ*ত্যু কেন? এগুলো নিশ্চয়ই তারই ইচ্ছায় হচ্ছে। কেন এত এত ধর্ম? আমি হিসাব মেলাতে পারলাম না।

এরপর জানতে পারলাম পৃথিবী আর মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে, জানতে পারলাম পৃথিবীতে প্রথম জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে, জানতে পারলাম সমূদ্রের নিচের জীবজগৎ সম্পর্কে, জানলাম হারিয়ে যাওয়া ডাইনোসর সম্পর্কে। আমি বুঝতে পারলাম মানুষের জ্ঞানের সীমার বাইরের বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্যই ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তা টার্মটা প্রয়োজন পড়ে। আর কিছুই না। জ্ঞানের শেষ যেখানে সেখানেই কোন অলৌকিক সত্তার ঘাড়ে ভর দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

চলবে…

© নাফিস সাদিক শাতিল

© NAFIS SADIQUE SHATIL

Tags :

Recent News

Popular News

Find Us on Youtube