১৯৮৮ সালের ১৮ আগস্টে হামাস একটি অঙ্গিকারপত্র প্রকাশ করে। এই অঙ্গিকারনামা পড়লে হামাসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। একসময় মুসলিমদের সাথে সাথে ভিন্ন ধর্মের মানুষেরাও গাজার ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলো। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।
হামাসের কর্মকান্ডে বর্তমানে গাজা ইস্যুতে মুসলিম বাদে অন্য কাউকে সহানুভূতিশীল দেখা যাচ্ছেনা। তুমুল জনপ্রিয় গাজা ক্রাইসিস যেটা নিয়ে মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে শত কোটি টাকার ব্যবসা করে নিয়েছে মুসলিম ব্যবসায়ীরা, কাড়ি কাড়ি টাকার বানিয়েছে হামাস নেতারা- সেই আবেগ অনুভূতি হঠাৎ নাই হয়ে গেলো কেন?
ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন বা সংক্ষেপে হামাসের মূলনীতিগুলো পডলে সেটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তাদের সেই অঙ্গিকারপত্রটি মূলত ৩৬টি ধারা নিয়ে গঠিত একটি বিস্তৃত ইশতেহার, যার প্রতিটি ধারা পড়লেই বোঝা যায় হামাসের মূল লক্ষ্য- ইজরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, ইহুদিদের বিলুপ্ত করে দেয়া।
অঙ্গিকারনামার আর্টিকেল ৬ এ বলা হয়েছে: “ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট একটি অনন্য ফিলিস্তিনি আন্দোলন, যার আনুগত্য আল্লাহর প্রতি এবং যার জীবনধারা ইসলাম। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো—ফিলিস্তিনের প্রতিটি ইঞ্চিতে আল্লাহর পতাকা উত্তোলন করা।”
উল্লেখ্য, এখানে ফিলিস্তিন বলতে ইজরায়েলের মূল ভূখন্ডকেও ফিলিস্তিনের অন্তর্গত বোঝানো হয়েছে। এবং তাদের ইশতেহারে যতবার ‘ফিলিস্তিন’ ব্যবহৃত হবে, বুঝে নিবেন তারা ইজরায়েলকে সহ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রুপরেখাকে বুঝিয়েছে।
এই অঙ্গিকারনামার ভূমিকায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে: “ইজরায়েল থাকবে, এবং তা থাকবে যতক্ষণ না ইসলাম তা মুছে ফেলে—যেমন পূর্বে অন্যান্যদের মুছে ফেলেছে।”
অর্থাৎ, মুসলমানেরা অতীতে যেভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়ে তাদের ভূমি দখল করেছে- ইজরায়েলের সাথেও একই কাজ তারা করবে। এটাই তাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
১১ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে: “ফিলিস্তিনের ভূমি হলো একটি ইসলামিক ওয়াকফ (পবিত্র দানভূমি), যা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্মের জন্য নিবেদিত। কেউ একে ছেড়ে দিতে বা এর কোনো অংশ পরিত্যাগ করতে পারে না।”
১৩ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে, “ফিলিস্তিন একটি ইসলামিক ভূমি। এ কারণেই ফিলিস্তিন মুক্ত করা প্রতিটি মুসলমানের ব্যক্তিগত কর্তব্য, সে যেখানেই থাকুক না কেন।”
আরো বলা হয়েছে, “শান্তি উদ্যোগ, তথাকথিত শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহ ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্টের (হামাসের) নীতির বিরুদ্ধে। এসব সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো ইসলামের ভূমিতে কাফেরদেরকে সালিশ নিয়োগ করা। ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের কোনো পথ নেই জিহাদ ছাড়া। প্রস্তাব, উদ্যোগ এবং সম্মেলন শুধু সময়ের অপচয়, নিরর্থক কাজ।”
আর্টিকেল ১৫ তে বলা হয়েছে, “যেদিন শত্রুরা মুসলিম ভূমির একটুকু দখল করে নেয়, সেদিন থেকেই জিহাদ প্রতিটি মুসলমানের জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। ইহুদিদের দখলের সামনে জিহাদের পতাকা উত্তোলন অপরিহার্য।”
আর্টিকেল ৩৩ এ বলা হয়েছে, “সেনারা একত্র হবে, যোদ্ধারা অন্য যোদ্ধাদের সঙ্গে যুক্ত হবে, আর ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র জনতা দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবে, উচ্চস্বরে বলবে—‘জিহাদের জয় হোক!’ এই আওয়াজ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছাবে এবং তা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না মুক্তি আসে, আক্রমণকারীরা পরাজিত হয় এবং আল্লাহর বিজয় আসে।”
আর্টিকেল ৭ এ বলা হয়েছে, “বিচারের দিন আসবে না যতক্ষণ না মুসলিমরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তাদের হত্যা করে। তখন ইহুদিরা গাছপাথরের আড়ালে লুকাবে, আর গাছ ও পাথর বলবে: ‘ও মুসলমান, আমার পেছনে একটি ইহুদি লুকিয়ে আছে, এসো ওকে হত্যা করো।’”
অর্থাৎ, একজন ইহুদি বেঁচে থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে হামাস! এটাই সত্য। হামাসের পক্ষে দাঁড়ানো মানে ইহুদি নিধনের যজ্ঞে নিজেকে শামিল করা। অবশ্যই ইজরায়েলের নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ইজরায়েল নিজেকে রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে।
ইজরায়েল হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলেও হামাস ইজরায়েল আক্রমণ করবে, এবং প্রত্যেক ইহুদিকে হত্যা করবে। সেই প্রতিজ্ঞা তারা করেছে। শুধু খাতা কলমে নয়, হাতে কলমে তার প্রমাণও দিয়েছে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। যেদিন হামাসের সন্ত্রাসীরা প্যারাসুটে করে নেমে ইজরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ হত্যা করে প্রায় হাজার খানেক নিরীহ ইজরায়েলি নাগরিককে।
ঐদিন ইজরায়েলের রেইম শহরে একটি মিউজিক ফেস্টিভ্যালে হামলা চালায় হামাসের জঙ্গিরা। প্যারাসুটে করে ইজরায়েলের ভূমিতে অবতরণ করে গুলি করে হত্যা করে প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক ইজরায়েলিকে। সেসময় পুরো বিশ্বের মুসলিমরা হয়েছিলো আনন্দে আত্মহারা। ইজরায়েল যখন কাঁদছিলো, মুসলিম উম্মাহ তখন ‘আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ’ রব তুলে খোদার শোকর গুজার করছিলো।
সেদিন ইহুদিদের লাশ দেখে মুসলিম বিশ্ব আনন্দে ভেসেছিলো। মসজিদে মসজিদে মিষ্টি বিতরণ হয়েছিলো। মানুষের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়ার শিক্ষা ইসলামই দেয়। কিন্তু তারাই আবার গাজার ছবি প্রচার করে সিম্প্যাথি আদায় করতে চায়। তারা বলতে চায়, হামাস যদি সন্ত্রাসী হয়, দোষ তো হামাসের। সাধারণ মানুষের দোষ কি ছিলো? আমরাও সেটাই বলি। হামাসের আক্রমণে নিহত সাধারণ ইজরায়েলিদের দোষ কি ছিলো? তাহলে কেন তখন আলহামদুলিল্লাহ পড়েছিলো?
এই ঘৃণাজীবীরা বিশ্ব মানবতার শত্রু। এদের জন্য যারা মানবতা দেখায় তারা বিশ্বের আর ৬০০ কোটি মানুষের কথা ভাবেনা। গাজার ভিডিওগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন, ভিডিওগুলো বেশ দামী ফোনে রেকর্ড করা। কোথাও বোম্বিং হওয়ার সাথে সাথে তারা শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা না করে ক্যামেরা অন করে ভিডিও শুরু করে।
মানুষ কাতরাচ্ছে আর তারা ‘ইয়া আল্লাহ, আল্লাহু আকবর’ কিংবা কোন সূরা পাঠ করতে করতে ভিডিও করে। আপনার সন্তান কিংবা সন্তানসম কেউ, অথবা আপনার প্রতিবেশী আত্মীয়দের অর্ধমৃত শরীর দেখলে কি আপনার কি প্রথমে ভিডিও ধারণের ইচ্ছা জাগবে? তাদের জাগবে। কারণ এসব হতাহত মানুষের ছবি ভিডিওই তাদের রসদ। মুসলিম বিশ্বকে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে উস্কে দিতে এসব ফুটেজই তাদের দরকার। ফান্ডিং আর সিম্প্যাথি আদায়ের জন্য তাদের লাশ দরকার।
গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা পয়দা করে হামাসের সদস্যরা হিউম্যান শিল্ড বানিয়ে নিজেদের রক্ষা করে আসছে বহু বছর ধরে। নিজেদের ছোট ছোট বাচ্চাদের বোমার মুখে ঠেলে দিয়ে- সেসব ভিডিও অনলাইনে প্রচার করাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এই বাচ্চাগুলোকে তাদের সন্ত্রাসী জঙ্গি বাপ মায়েরা নিজেদের স্বার্থে শহীদ বানায়। এদের একবিন্দু মায়া দয়া কাজ করেনা নিজেদের সন্তানদের জন্য। সন্তান জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্যই থাকে তাকে শহিদ বানানো।
এতো বছর ধরে শুনে আসছি ইজরায়েল নাকি গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাচ্ছে। তাহলে গাজার জনসংখ্যা বাড়ে কিভাবে? এই যুদ্ধাবস্থায় সন্তান উৎপাদন করে শিশুর জীবন বিপদে ফেলতে চায় কারা? গাজাবাসী মুসলিমরাই বেশি বেশি সন্তান নিয়ে জনসংখ্যা বাড়ায়। পুরো বিশ্বেই মুসলিমরা সংখ্যা দিয়ে পৃথিবী জয় করতে চায়। তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বয়কট করেছে অনেক আগেই। একারণে হামাসের জন্য কনডম কেনার ইউএসএইড এর ৫০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড একারণেই বন্ধ করেছেন ট্রাম্প।
ইজরায়েলি সেনারা গাজাবাসীকে লিফলেট বিতরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বললেও তারা যায়না- কারণ নিজেরা শহিদ হতে চায়। এইসব বাচ্চাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী এদের জিহাদি বাপ মা। তারাই তাদের বাচ্চাদের শহিদ বানাতে বদ্ধপরিকর। এখন তারা গাজাবাসীর লাশের ছবি দিয়ে মানুষের কাছে করুণা ভিক্ষা চাইছে। এই বর্বর ইতর খুনীর দল কয়দিন পর কোথাও জঙ্গি হামলায় কোন অমুসলিম মারা গেলে সেটা নিয়ে আবারও উল্লাস করবে। আমি নিশ্চিত।
বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলিম যেদিন ১৪০০ বছর আগে বনু কুরাইজা গোত্রের উপর অতর্কিত হামলায় নারী-শিশুসহ ৮০০ নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে সেদিন বুঝবো তাদের ভেতর পরিবর্তন এসেছে। তার আগে নয়।
তাই গাজাকে বাঁচান, গাজাকে বাঁচান হামাসের হাত থেকে। গাজাকে রক্ষা করুন ইসলামের হাত থেকে। তাহলেই শান্তি আসবে।
© নাফিস সাদিক শাতিল/ NAFIS SADIQUE SHATIL
আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন