রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

Contact: nafissadique090@gmail.com, shatil2208@gmail.com

লজিক্যাল ফ্যালাসি: প্রাধিকারের কুযুক্তি

• উদাহরণ ১: “বিজ্ঞানী ডঃ শমশের আলী নাকি ভাগ্য বদলের আংটি পরতেন, তাই আংটি ভাগ্য বদলাতে পারে।”
• উদাহরণ ২: “সৈয়দ আলী আহসান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, তাই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা সঠিক।”
• উদাহরণ ৩: “বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ গোলাম রব্বানি নিয়মিত ধূমপান করেন, তাই ধূমপান ক্ষতিকর না।”

এই তিনটা কথাই আসলে একই ধরনের ভুল যুক্তির উদাহরণ, যেটাকে বলা হয় “প্রাধিকারের কুযুক্তি”। এখানে কারো অবস্থান বা খ্যাতি দেখিয়ে একটা দাবি সত্যি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু আসলে সেটা যুক্তির দিক থেকে ঠিক না। কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি কী বিশ্বাস করতেন বা কী করতেন, সেটা দিয়ে কোনো কিছুর সত্য-মিথ্যা প্রমাণ হয় না।

যেমন ধরুন, স্টিফেন হকিং ছিলেন একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী, তিনি ছিলেন নাস্তিক। কিন্তু এটা প্রমাণ করে না যে নাস্তিকতা সঠিক। একইভাবে, আইজ্যাক নিউটন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন বলে সেটা ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ হয় না। সত্য-মিথ্যা নির্ভর করে কতটা যুক্তি আছে তার ওপর, কারো ব্যক্তিগত মতামতের ওপর না।

আরো কিছু উদাহরণ:
• “যেহেতু অমুক বিজ্ঞানী ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, তাই ঈশ্বর আছেন।”
• “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্ল্যানচেট করতেন, তাই প্ল্যানচেট সত্যি।”

এই ধরণের ভাবনাগুলোও আসলে প্রাধিকারের কুযুক্তি। এখানে ধরে নেওয়া হয় বিখ্যাত মানুষদের বিশ্বাস বা কাজ কখনোই ভুল হতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে তারাও মানুষ, তাদেরও ভুল হতেই পারে। ধরুন আইনস্টাইন যদি নিজের স্ত্রীকে মারতেন, সেটা কি প্রমাণ করে যে স্ত্রীকে মারাটা ভালো কাজ? মোটেও না! এটা কেবল প্রমাণ করে, আইনস্টাইনও একটা ভুল কাজ করতেন।

সুতরাং, কোনো বিখ্যাত মানুষ কিছু বললেই সেটা ধরে নেওয়া যাবে না যে কথাটা ঠিক। আমাদের নিজেদের যুক্তি দিয়ে ভাবতে হবে, বিচার করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রাধিকারের কুযুক্তি আসলে একটা যুক্তিগত ভুল, যেখানে সত্য প্রমাণ করতে কারো পরিচিতি বা অবস্থানকে কাজে লাগানো হয়। যদিও কখনো কখনো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত মূল্যবান হতে পারে, তবু শুধু তাদের নাম দেখিয়ে কিছু প্রমাণ করা উচিত না। কারণ এতে যুক্তির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় খ্যাতি, যা সত্য প্রমাণের উপায় না।

আরও কিছু উদাহরণ:
• “অমুক বিজ্ঞানী ভাগ্য পরিবর্তনের আংটি পরতেন, তাই আংটি কাজ করে।” — এখানে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, শুধুই বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত অভ্যাস।
• “অমুক দার্শনিক পীরবাবার পানি পড়া খেতেন, তাই পানি পড়া রোগ সারায়।” — এই দাবির পেছনে বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই, শুধু একজন ব্যক্তির কাজকে প্রমাণ ধরা হয়েছে।
• “বিখ্যাত এক ডাক্তার ওঝার কাছে গিয়েছিলেন, তাই ওঝা সত্যিই রোগ সারাতে পারে।” — কোনো ডাক্তার কার কাছে গেলেন, সেটা দিয়ে ওঝার সত্যতা প্রমাণ হয় না।

এই ভুল যুক্তিগুলো আমাদের চিন্তাভাবনায় সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই যেকোনো দাবি যাচাই করতে হলে যুক্তি, প্রমাণ আর বিশ্লেষণের সাহায্য নিতে হবে, শুধু বড় নাম দেখিয়ে কিছু বিশ্বাস করা ঠিক না।

© নাফিস সাদিক শাতিল/ NAFIS SADIQUE SHATIL

আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন

পড়ুন যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক বইঃ Debating God With a Brain

পড়ুন ফিকশন বইঃ The Atheist Who Met God and Devil

 

Tags :

Recent News

Popular News

Find Us on Youtube