রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

Contact: nafissadique090@gmail.com, shatil2208@gmail.com

বিবর্তন কি চোখে দেখা যায়?

বিবর্তনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে হাস্যকর প্রচলিত কু্যুক্তি হল-বিবর্তন নাকি চোখে দেখা যায়না। বিজ্ঞান সম্পর্কে ন্যুনতম ধারনা না থাকলেই মানুষ কেবল এরকম দাবী করতে পারে। মানুষ,গরু,ছাগল এসব বড় বড় প্রানীদের বিবর্তন দেখতে হলে যেমন কয়েক লক্ষ বছর বাচতে হবে,তেমনি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের বিবর্তন কয়েক মিনিট বা ঘন্টায় নিজ চোখেই পর্যবেক্ষন করা যায়।

হ্যা,বিভিন্ন মাইক্রো বিবর্তন সরাসরি পর্যবেক্ষনযোগ্য। আর এরকম অনেক ছোট ছোট বিবর্তন জমা হয়ে হয় ম্যাক্রোবিবর্তন। প্রশ্ন করতেই পারেন, ম্যাক্রোবিবর্তন কি সরাসরি পর্যবেক্ষনযোগ্য?

হ্যা,সেটাও সম্ভব।বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে সম্পূর্ন নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রানী তৈরী করতে সমর্থ হয়েছেন।আর বিজ্ঞান সবসময় সরাসরি পর্যবেক্ষনের উপর নির্ভর করেনা। আর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী থাকলে আপনি নিজেই অনেক কিছু পরীক্ষা করতে পারবেন। যেমন আমাদের চারপাশের বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন আছে।যা চোখে দেখা যায়না। কিন্তু ঘরে বসেই একটা মোমবাতি দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে বর্ণ-গন্ধহীন এই গ্যাসের অস্তিত্বের পরীক্ষা করতে পারি। অথবা,গ্র‍্যাভিটির কথাই চিন্তা করুন।অথবা পৃথিবীর আহ্নিক গতিও আপনি কিন্তু খালি চোখে টের পাবেননা।

আর সব সময় যে প্রানীর বিবর্তনে লাখ লাখ বছর লাগবে বা হাজার হাজার বার মিউটেশন ঘটা লাগবে এমন কোন কথা নেই।মাত্র কয়েক হাজার বছরেই বা একটি মাত্র জিনের পরিবর্তনেই বিবর্তন সম্ভব। যেমন স্টিকেলব্যাক নামক একটি মাছ নদী ও সমুদ্রে সমানভাবে দেখতে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের মতে সর্বশেষ বরফ যুগে,মাত্র ১০ হাজার বছর আগে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে একটি অংশ নদীতে এসে পড়ে। সমুদ্রের মাছগুলোর গায়ে ৩৫ টি বাড়তি প্লেট বা কাটার মত অংশ আছে যাতে তারা নিজেদের অন্য সামুদ্রিক প্রানীর দাতালো আক্রমন থেকে রক্ষা করতে পারে,কিন্তু নদীর মাছগুলোর নিজেদের শরীরে অতিরিক্ত ভার বহনের কোন প্রয়োজন নেই। তাই তারা বিবর্তন প্রক্রিয়ায় অভিযোজিত হয়ে এই বাড়তি স্তর থেকে রেহাই পেয়েছে।এই সবই ঘটেছে মাত্র একটি জিনের পরিবর্তনের কারনে।

১০ হাজার বছর তো অনেকটা সময়। এটা যদি চিন্তা করে থাকেন তাহলে বলছি,কয়েক বছর আগে বিজ্ঞানীরা দাবী করলেন, স্টিকেলব্যাক মাছটিকে সমুদ্র থেকে নদীর পানিতে স্থানান্তর করলে তারা নাকি এক জেনারেশনেই এই বিবর্তন ঘটিয়ে ফেলতে পারবে।স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল Pitx1 নামের এই বিশেষ জিনটিকে সমুদ্রের মাছের শরীর থেকে আলাদা করে নদীর মাছের ডিমের মধ্যে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। এই ডিম ফুটে যেই পোনা বের হয়,তাদের শরীরে বাড়তি কাটার স্তর ছিল।কত চমৎকার উদাহরন।

তুলনামূলক দৈহিক গঠনতন্ত্র,ভ্রুণতত্ত্ব,জীবাশ্ম রেকর্ড,DNA পরীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির বিবর্তনের প্রমান পাওয়া গিয়েছে। বিবর্তন একই সাথে বৈজ্ঞানিক থিওরী এবং ফ্যাক্ট। এমন একটি প্রানীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি যা দিয়ে বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করা যায়।এখন পর্যন্ত কোন বেমানান ফসিল বা ভুল স্তরের ফসিল পাওয়া যায়নি।

একবার বিজ্ঞানী জেবি এস হালডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কিভাবে বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করা যায়? উত্তরে হালডেন বলেছিলেন,“কেউ যদি প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল খুঁজে পায়”।

NAFIS SADIQUE SHATIL / নাফিস সাদিক শাতিল

পড়ুন যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক বইঃ Debating God With a Brain

পড়ুন ফিকশন বইঃ The Atheist Who Met God and Devil

পড়ুন ভ্রমণ কাহিনীঃ Adventure of Ryan and George

বিজ্ঞানীদের জীবনকাহিনী নিয়ে বইঃ From Apple to Algorithm

বইগুলোর প্রিন্টেড ভার্সন কিনুন আমাজন থেকে।

Tags :

Recent News

Popular News

Find Us on Youtube