বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

Contact: nafissadique090@gmail.com, shatil2208@gmail.com

মামা-ভাগ্নে : কোরানের আয়াত নিয়ে সংশয়

ভাগ্নেকে বললাম, “অনেক তো হলো, এবার দ্বীনের পথে আয়। কোরান যে আসমানী কিতাব এটা মেনে নে।” ভাগ্নে বললো, “ধরো, যদি মেনেও নেই যে এটা আসমানী কিতাব। তাও এটাকে শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী বলা যাবেনা। কোরানে একটা আয়াত নাজিল করেছে শয়তান, আল্লাহ করেনি। তাহলে এটা কিভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী হয়? এটায় তো শয়তানেরও শেয়ার আছে।”

“নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। এসব কি বলছিস? কোরানে শয়তানের আয়াত? মানে কি? এসব মিথ্যা বলতে তোদের কি বুক কাপেনা?”, আমি ক্ষেপে গিয়ে বললাম। “ঐ আয়াত যেটা শয়তান জিব্রাইলের বেশে এসে নবীকে ধোঁকা দিয়ে নাজিল করে গিয়েছিলো, সেটা তো নবীই বলে গিয়েছেন। তুমি যদি নবীর কথা অবিশ্বাস করো তাইলে তো কিছু করার নেই”, ভাগ্নে বললো।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাগ্নে আবার বলা শুরু করলো, “তোমাকে মূল কাহিনী বলি, মক্কায় নবীর সাথে কাফের মুশরিকদের বিবাদ তখন চরমে। তারা তখন দাবী করে, যদি মুহাম্মদ তাদের দেবতাদের মেনে নেয়, তারাও আল্লাহকে মেনে নিবে। প্রথমে মুহাম্মদ তাদের এই দাবী মেনে নেননি। কিন্তু হঠাৎই সূরা আন নাজমে আল্লাহ এমন একটা আয়াত নাজিল করে দেন, যাতে পৌত্তলিকদের দেবী লাত, মানাত, উজ্জার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয় মুহাম্মদ। নাজিলকৃত আয়াতে দেখা যায় আল্লাহ বলছেন, “তোমরা কি ভেবে দেখেছ “লাত” ও “ওজ্জা” সম্পর্কে এবং তৃতীয় বস্তু “মানাত” সম্পর্কে? এরা হলো সেই মহান গারনিক, যাদের সুপারিশ প্রত্যাশিত।” তুমি ভেবে দেখো এই আয়াতে আল্লাহ লাত, মানাত, উজ্জা তিন দেবীকেই মেনে নিয়েছেন। আর তাদের সুপারিশও আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে বলে ওয়াদা করেছেন।”

ভাগ্নেকে থামিয়ে বললাম, “আচ্ছা এই ‘গারনিক’ শব্দের মানে কি? এটা কি জিনিস?” ভাগ্নে বললো, “গারনিক এক ধরণের উড়ন্ত সারস পাখি। গারনিককে সে সময়ের সমাজে সম্মান দেয়া হতো। আল্লাহ প্যাগানদের তিন দেবীকে সেই মহান গারনিকের সাথে তুলনা দিয়েছেন।” ভাগ্নেকে থেমে যেতে দেখে আমি বললাম, “তারপর?”

ভাগ্নে আবার বলা শুরু করলো, “নবীর উপর সূরা আন নাজম নাজিল হওয়ার পর তিনি এক সমাবেশে তা পড়ে শোনালেন এবং সেজদাহ দিলেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো তার সাথে সেখানে উপস্থিত কাফের মুশরিকরাও সেজদাহ দিলো। মুহাম্মদের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ হয়ে গেলো। যে এতদিন তাদের দেবীদের গালাগালি দিয়ে এসেছে, সে কিনা আজ তাদের প্রশংসা করেছে। এ খবর চারিদিকে রটে গেলো। সেদিন রাতে জিব্রাইল এসে নবীকে বকাঝকা করলো- সে বানিয়ে বানিয়ে কেন আয়াত বলেছে সেই জন্য। জিব্রাইল দাবী করলো এমন কোন আয়াত সে নিয়েই আসেনি। তাহলে আয়াতটি পাঠালো কে?”

আমি শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলাম, “কে পাঠালো?”

ভাগ্নে বললো, “শয়তান! শয়তান জিব্রাইলের বেশে এসে নবীকে এই আয়াত বলে দিয়ে গিয়েছিলো। এই ঘটনায় নবী খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়লো। পরবর্তীতে এই আয়াতে শেষের অংশটুকু শয়তানের আয়াত হিসেবে বাতিল করে দেয় মুহাম্মদ। এর পরিবর্তে সংশোধিত আয়াত নাজিল করেন আল্লাহ। এখন আমার প্রশ্ন হলো, এরকম আরো কতগুলো শয়-তানের আয়াত থেকে গেছে কোরানে? যেগুলো সংশোধিত হয়নি? শয়-তান জিব্রাইলের বেশে এসে নবীকে ধোঁকা দিয়ে আরো কতগুলো আয়াত কোরানে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে সেটা কি কেউ জানে?

আমি চিন্তিত মুখে বললাম, “সেরকম হলে অবশ্যই আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিতেন। কারণ, আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী, উত্তম ফয়সালাকারী।”

“আল্লাহর নিজের পাঠানো আয়াত ছাগল খেয়ে চলে যাওয়ায় কোরান থেকে বাদ পড়ে যায়, আর শয়তানের পাঠানো আয়াত কোরানে ঢুকে যায়- এই হলো উত্তম পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনার নমুনা? এমন ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনাকারীকে কিভাবে সৃষ্টিকর্তা হয়?”

আমি “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ” পড়তে পড়তে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম।

লেখক : ব্লগার নাফিস সাদিক শাতিল

Blogger: Nafis Sadique Shatil

© NAFIS SADIQUE SHATIL / নাফিস সাদিক শাতিল

আরো ব্লগ পোস্ট পড়ুন  , ইউটিউব চ্যানেল,  Amazon Profile, Goodreads Profile, Blogger Profile.

এই ক্যাটাগরির আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন

পড়ুন যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক বইঃ Debating God With a Brain

পড়ুন ফিকশন বইঃ The Atheist Who Met God and Devil

পড়ুন ভ্রমণ কাহিনীঃ Adventure of Ryan and George

বিজ্ঞানীদের জীবনকাহিনী নিয়ে বইঃ From Apple to Algorithm

বইগুলোর প্রিন্টেড ভার্সন কিনুন আমাজন থেকে।

Tags :

Recent News

Popular News

Find Us on Youtube