সকাল বেলা ভাগ্নে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো। “মামা, একটা কঠিন সমস্যায় পড়েছি। আমাকে উদ্ধার করো।” আমি বললাম, “কি সমস্যা বল। কোরান হাদিসের আলোকে আমাদের কাছে সকল সমস্যার সমাধান আছে।”
ভাগ্নে বললো, “পাশের গ্রামের আনিস চাচা গত সপ্তাহে মারা গিয়েছেন।” আমি বললাম, “হ্যা শুনেছি। খুব ভালো মানুষ ছিলেন।”
“মৃত্যুকালে তিনি ২ কন্যা, পিতা, মাতা ও এক স্ত্রী এবং ২৪ শতাংশ জমি রেখে গিয়েছেন। এখন সূরা নিসার বিধান অনুযায়ী মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ ২ কন্যার, ১/৬ অংশ পিতার, ১/৬ অংশ মাতার এবং ১/৮ অংশ স্ত্রীর পাবার কথা।”, ভাগ্নে বললো।
আমি বললাম, ” হ্যা। সম্পত্তি তো ওয়ারেশদের ভেতর এভাবেই ভাগ হওয়ার কথা। তাতে সমস্যা কি?”
ভাগ্নে বলতে থাকলো, “অর্থাৎ, কোরানের আইন অনুযায়ী ২ কন্যা পাবে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ। অর্থাৎ, ২৪ শতকের ১৬ শতক পাবে ২ কন্যা। পিতা ও মাতা দুজন মিলে পাবেন ৮ শতক। স্ত্রী পাবেন ৩ শতক। অর্থাৎ, ২ কন্যা, পিতা-মাতা, স্ত্রী মিলে সম্পত্তি পাবেন ১৬+৮+৩=২৭ শতাংশ। কিন্তু আনিস চাচা সম্পত্তি রেখে গিয়েছেন ২৪ শতাংশ। তাহলে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ সম্পত্তি কোথা থেকে আসবে? আইন অনুযায়ী বন্টন করতে গেলে তো ৩ শতক জমি কম পড়ে যাচ্ছে। এর সমাধান কি?”
“আরে বোকা এতো সহজ বিষয়। ডাক্তার জাকির নায়েক তো এই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। জাকির নায়েক পাটিগণিতের সরলের নিয়মের সাথে মিলিয়ে ওয়ারেশ বন্টনের নিয়মকে মোডিফাই করেছেন। তার মতে স্ত্রীর সম্পত্তি আগে দিয়ে দিতে হবে। তারপর দিতে হবে বাবা মায়ের অংশ। তারপর বাদবাকিটা কন্যাদের ভেতর বন্টন করে দিলেই অংক মিলে যাবে।” আমি বললাম।
“কিন্তু মামা, তাতে কি বন্টন সহিহভাবে হবে? এতে তো কন্যারা মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবেনা, আবার বাবা মাও মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেনা। নাউজুবিল্লাহ। বিষয়টা কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছেনা?” ভাগ্নে পাল্টা প্রশ্ন করলো।
“শোন, তুই বোধ হয় আওল নীতির কথা শুনিসনি। এই সমস্যা সাহাবায়ে কেরামগণ অনেক আগেই সমাধান করে দিয়ে গেছেন। আওয়াল নীতি অনুযায়ী ২৪ শতাংশকে আগে ২৭ দিয়ে ভাগ দিয়ে তারপর সবাইকে ন্যায্য প্রাপ্য সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে হবে। মানে ২৪ ডেসিমেল জমিকে ২৭ ডেসিমেল ধরে হিসাব করতে হবে। তাহলে হিসাব মিলে যাবে।” আমি বললাম।
ভাগ্নে বললো, “আওল নীতি সম্পর্কে আমি জানি। আওল অনুযায়ী আনিস সাহেবের ২ কন্যা পাবে ৭.১২ শতাংশ করে। কিন্তু কোরান অনুযায়ী পাওয়ার কথা ৮ শতাংশ করে। একইভাবে আওয়াল অনুযায়ী বাপ মা পাবে ৩.৫৪ শতাংশ করে, কিন্তু পাওয়ার কথা ৪ শতাংশ। কোরআনের আইনের সাথে তো মিলছেনা মামা।”
আমি বললাম, “তুই যদি ইজমা কিয়াস না মানিস তাহলে আর কি করার আছে? তুই এর সমাধান বল।”
“আনিস চাচার জমির পাশে তো তোমার কিছু জমি আছে। এক কাজ করো ওখান থেকে ৩ শতক জমি আনিস চাচার স্ত্রী কন্যাদের রেজিস্ট্রী করে দাও। তাহলেই তাদের হিসাব মিলে যাবে। তুমি রাজি থাকলে বলো, আমি কাগজপত্র রেডি করি। এ ছাড়া আর কোন সমাধান নেই।”, বলেই ভাগ্নে এক দৌড়ে বের হয়ে গেলো।
আমি পড়ে গেলাম এক গভীর চিন্তায়, ‘আসলেই তো, এর সমাধান কি?’
নাফিস সাদিক শাতিল / NAFIS SADIQUE SHATIL
এই ক্যাটাগরির আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পড়ুন যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক বইঃ Debating God With a Brain
পড়ুন যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক বইঃ Debating God With a Brain
পড়ুন ফিকশন বইঃ The Atheist Who Met God and Devil
পড়ুন ভ্রমণ কাহিনীঃ Adventure of Ryan and George
বিজ্ঞানীদের জীবনকাহিনী নিয়ে বইঃ From Apple to Algorithm
বইগুলোর প্রিন্টেড ভার্সন কিনুন আমাজন থেকে।
আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন