ভাগ্নে বললো, “মামা চলো মরণোত্তর দেহ দানের ব্যাপারে কথাবার্তা ফাইনাল করে ফেলি।” আমি আতংকিত হয়ে বললাম, “এসব কি বলিস? এই শরীর, শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মালিক কি তুই? যে চাইলেই দান করে দিবি?” ভাগ্নে পাল্টা প্রশ্ন করলো, “আমার শরীর, আমার অঙ্গের মালিক আমি নই? তাহলে কে?”
“কে আবার? যিনি তোকে সৃষ্টি করেছেন সেই মহান স্রষ্টা। তিনি তোকে সৃষ্টি করে তোর বডিটা তোকে কিছুদিনের জন্য ব্যবহার করতে দিয়েছেন। তাই তোর শরীরের কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করা ঠিক না। তুই ইচ্ছা করলেই তোর কোন অঙ্গ দান করে দিতে পারিস না। এই অধিকার তোকে দেয়া হয়নাই।”
“ও আচ্ছা। তাহলে এই একই লজিকে কোন ধরণের অপারেশনও তো করা যাবেনা। ধরো কারো এপেন্ডিক্স অপসারণের প্রয়োজন পড়লো, তাহলে সে কি করবে? অথবা কারো একটা দাঁত তোলার প্রয়োজন পড়লো, তাহলে সে কি করবে? এসব করলে তো দেহের পরিবর্তন হয়ে যাবে।” ভাগ্নে বললো।
“তুই আসলে বেশি বুঝিস। রোগব্যাধির বিষয়টা আলাদা। আর স্বেচ্ছায় দান করার বিষয়টা আলাদা। তোদের নাস্তি’কদের মাথায় আসলে কিচ্ছু নাই। আসল ব্যাপার হলো মানুষকে তার ভাগ্যলিপি অনুসারে বানানো হয়েছে। যার ভাগ্যে কোন নির্দিষ্ট অর্গান ফেইলিওর লেখা আছে, সে কেন আরেকজনের অর্গান নিয়ে বেঁচে থাকবে? ভাগ্যলিপিকে পরিবর্তনের চেষ্টা করাটা অন্যায়।” আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম।
“সেই একই যুক্তিতে তো আমাদের সকল ওষুধ পত্র, এন্টিবায়োটিক, ভ্যাক্সিন, অপারেশন, ট্রিটমেন্ট সবই বয়কট করে দিতে হবে। কারণ যার ভাগ্যে রোগব্যাধিতে মৃত্যু লেখা আছে তার তো কোন অধিকার নেই ভ্যাক্সিন, এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করে মৃত্যুকে বিলম্বিত করার।” ভাগ্নে পাল্টা উত্তর দিলো।
“আসলে তোদের মত স্বল্পবুদ্ধির গ*বেটরা কিছুই বুঝতে চাস না। তোর যদি মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস থাকতো, তাহলে এই চিন্তা কখনোই মাথায় আসতো না। মৃত্যুর পর আমাদের আবার জীবন্ত করা হবে। তোর বডি দান করে দিলে তুই কি নিয়ে দাড়াবি?”
“মামা, দাড়াতে গেলে গ্র্যাভিটি লাগে। তুমি কি শিওর সেখানে মহাকর্ষ কাজ করবে? তাছাড়া সেসময় কিডনি লিভার পাকস্থলি হার্ট লাংস এগুলোর কাজই বা কি হবে? এগুলো দান করে দিলে সমস্যা কি? শুনেছি সেখানে মানুষের ক্ষুধা লাগবেনা, হাগু লাগবে না। তাহলে পরিপাকতন্ত্রের কাজ কি? সেখানে কি বায়ুমন্ডল থাকবে? বায়ুমন্ডলে কি অক্সিজেন থাকবে? না থাকলে লাংসের কাজ কি? তখনও কি বেঁচে থাকতে অক্সিজেনের উপর ভরসা করা লাগবে? তখনো কি শ্বেত রক্তকণিকা রোগ প্রতিরোধ করবে? হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিবহণ করে নিয়ে যাবে কোষে কোষে? তখনও কি অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করবে? এগুলোর কাজ কি সে সময়?”
এই টাইপের মূর্খের সাথে তর্কের কোন মানেই হয়না ভেবে আমি আর কোন কথা না বলেই উঠে চলে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে ভাগ্নে বললো, “মামা, আত্মঘাতী বো মা মারতে গিয়ে যাদের বিশেষ অঙ্গ উড়ে যায়, তারা কি নিয়ে দাঁড়াবে?”
Blogger : Nafis Sadique Shatil
লেখক : নাফিস সাদিক শাতিল
আরো ব্লগপোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পড়ুন যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক বইঃ Debating God With a Brain
পড়ুন ফিকশন বইঃ The Atheist Who Met God and Devil / The Atheist Who Met God and Devil
পড়ুন ভ্রমণ কাহিনীঃ Adventure of Ryan and George
বিজ্ঞানীদের জীবনকাহিনী নিয়ে বইঃ From Apple to Algorithm